রাজধানীর সড়কে যেন প্রতিদিন নানা অনিয়ম চলছেই। ওভারটেকিং টেন্ডেন্সি, ফিটনেস বিহীন গাড়ি, লাইসেন্স বিহীন চালক, বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো ইত্যাদি নানা অনিয়ম। এ অনিয়ম নিয়ে কম নিয়ে কাণ্ড ঘটেনি, কখনও কখনও আন্দোলন অবদি গড়িয়েছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো কিছুই আমলে নেওয়া হয় না এই শহরে, আবার দিন শুরু হয় অনিয়ম দিয়েই।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) আবারো এরকম এক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর হাতিরঝিল সংলগ্ন এলাকায়। রিকশায় চড়ে অফিসে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার রশিদ মামুন। তিনি যেই রিকশায় ছিলেন সেই রিকশাকে পেছন থেকে একটি প্রাইভেটকার জোরে ধাক্কা দেয়। তখন তিনি রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে মারাত্মক আঘাত পান। পরে তিনি দেখেন অপ্রাপ্তবয়স্ক এক ছেলে গাড়িটি চালিয়েছিলেন। তখন গাড়িতে থাকা আরেকজন ভুলের জন্য ক্ষমা না চেয়ে উল্টো পুলিশের সন্তান বলে দাবি করে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করেন সাংবাদিক রশিদ মামুন।
এই তিক্ত অভিজ্ঞতা ও ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দেন রশিদ মামুন। রশিদ মামুনের স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-
এ শহর আমাদের নয়, পুলিশের ছেলের !!!!!!
আজ বিকেলে অফিসে আসার সময়ের ঘটনা। হাতিরঝিলের বাংলামটর প্রান্ত থেকে বিয়ামের গলি দিয়ে রিকশা নিয়েছি। সবে রিকশায় উঠলাম। রিকশার প্যাডেল ঘুরতেই খুব জোরে একটি প্রাইভেট কার ধাক্কা দিলো। রিকশার সামনের চাকা ভেঙ্গে রিকশাওলা আর আমি দুজনেই রাস্তায় পড়ে গেলাম। গাড়ির চাকা আমার মাথার ঠিক কয়েক ইঞ্চি পাশ দিয়ে চলেগেল। ধন্যবাদ সৃষ্টিকর্তাকে। পথচারিরা গাড়িটিকে আটকালো আমিও সামনে গিয়ে দড়ালাম। পা তখন ব্যথায় ছিড়ে যাচ্ছিলো। গাড়িটি যে চালাচ্ছিল সে ড্রাইভার নয়। দরজা খুলে এক ছেলে বের হয়ে এসে বলল কার গাড়ি আটকায়ছিস জানিস আমি পুলিশের ছেলে। আমার পাকা দাড়িগুলো দেখে মাঝে আমার মেয়ে বলে বাবা তোমার হোয়াইট কালারের এগুলো কি? আমি বলি বয়স হচ্ছে তার সাইন এগুলো। কয়েকদিন সেভ না করায় সেগুলো আবার বেরিয়ে পড়েছে। ছেলেটা দেখছেও…..একটা ছেলে আমার থেকে ২৫ বছরের ছোট হবে। আমাকে তুই তুই করে বলছে। কেন তার বাবা এই শহেরের পুলিশ বলে। ছি। আমি বললাম বাবার নাম বল সেতো আর বলে না। বললাম তুমি কোথায় পড়? বলল ঢাকা কলেজে। জানতে চাইলাম এইগুলো শিখায়। মানুষকে মেরেদিয়ে তার পাশ দিয়ে বের হয়ে যেতে শেখায়…….. এরপর পুলিশ এল সেখানেও পুলিশের পরিচয়। আমি জানি এসব কিছুতে কিছু হয় না। আমি মরেগেলেও কিছু হতো না হয় না। হয় না। এমন ভুরি ভুরি উদাহরন।
কিন্তু ছেলেটার আচরন দেখে আমার বহু দিন পর ভিক্টর ব্যনার্জির লাঠি সিনেমার কথা মনে পড়ছে। ছোট বেলায় অমি অনেকবার এই সিনেমা দেখিছি। ওই ছেলের, ছেলের বাবার, মায়ের এই ছবিটা দেখা খুব দরকার। আমাদের এক স্যার একবার ক্লাসে জানতে চেয়েছিলেন বড় হয়ে কে কি হতে চাও। সকলে বলল আমি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট……. স্যারের উত্তরটা আমার খুব ভাল লেগেছিল স্যার বলল, কেউ মানুষ হবা এই কথাটাতো বললে না। আমি সব সময় ভাবি আমার ছেলেটার এ প্লাস গোল্ডেন এ প্লাসের দরকার নেই শুধু মানুষ হলেই হবে। নচিকেতার বৃদ্ধাশ্রম গানটা আমি কয়েক হাজার বার শুনেছি। বাবার ঘড়ি ছড়ির যায়গা হয় না ফ্লাটে…………….কেন হয়! সব দায় কিন্তু ছেলের না। বাবা হিসেবে এই দায় কিন্তু আমারও…….ভেবে দেখবেন প্রিয় বাবারা। আমার ছেলে আমার পরিচয় ব্যবহার করে অপকর্ম করলে আমি ভাত বন্ধ করে দিতাম। হয়তো চীরদিনের জন্য নয়। কারণ ওকে শুধরানো দরকার। না হলে আমিতো ওর ভিবিষ্যত নিজের হাতেই নষ্ট করে দিচ্ছি………পায়ে প্রচন্ড ব্যথা যাই এক্সেটা করেই আসি।