জামালপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের অফিসে খাস কামরার পর এবার পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সভাপতির কক্ষে গোপন খাস কামরার সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে ওই বিভাগের বর্তমান ও সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই কামরার খাটসহ আসবাবপত্র বের করে দেয়। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের বর্তমান সভাপতি আমিরুল ইসলাম ও সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান বিভিন্ন সময় বিভাগের ছাত্রীদের ‘প্রলোভন ও ভয়ভীতি’ দেখিয়ে যৌন নির্যাতন করেছেন।
এ বিষয়ে দুই অধ্যাপককে নিয়ে ক্যাম্পাসে ‘কানাঘুষা’ হলেও কেউ লিখিত অভিযোগ দিতে সাহস পাননি বলে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য।
তারা বলছেন, সম্প্রতি সভাপতির কক্ষের ভেতরে খাট পেতে খাস কামরা তৈরির বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা সেখানে ঢুকে সুসজ্জিত বিছানার সন্ধান পায়।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদ চৌধুরী আসিফ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টিতে এতদিন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কিন্তু আজ অফিসকক্ষে এ ধরনের সুসজ্জিত খাস কামরা পাওয়া গেল। এর কী প্রয়োজন তা আমার বোধগম্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হেনস্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত শিক্ষকদের বিচার দাবি করছি।’
তবে ওই দুই অধ্যাপক যৌন হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিভাগের বর্তমান সভাপতি আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘নৈশ ও নিয়মিত কোর্সের ক্লাস নেওয়ার জন্য ক্যম্পাসে শিক্ষকদের দীর্ঘ সময় অবস্থান করার কারণে আগের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিশ্রাম কক্ষ তৈরি করেন, যা শুধু বিশ্রামের জন্যেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।’
বিভাগের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামানও যৌন হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘প্রশ্নপত্র প্রণয়নসহ বিভিন্ন গোপন কাজের জন্যে কক্ষটি তৈরি করা হয়েছিল। কখনোই কোনো নারী শিক্ষার্থী যৌন হেনস্তার অভিযোগ করেনি। অভ্যন্তরীণ শিক্ষক রাজনীতির কারণে ছাত্রদের দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’
তবে অন্যান্য বিভাগে এ ধরনের খাস কামরা না থাকলেও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে কেন দরকার হয় এমন প্রশ্নে তিনি কোনো কথা বলেননি।
এ বিষয়ে প্রক্টর প্রীতম কুমার দাস বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালায় বিভাগীয় সভাপতির কক্ষে এ ধরনের খাট বিছানোর সুযোগ আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কথিত ওই খাস কামরা থেকে আমরা খাটসহ আসবাবপত্র বের করে দিয়েছি। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’