sliderমহানগরশিরোনাম

উন্নয়নের আড়ালে অব্যবস্থাপনা: ঠিকাদারি দুর্নীতির বলি সাধারণ মানুষ

আমির হোসেন সজিব,ঢাকা: ঢাকা শহর আজ উন্নয়নের এক বিশাল কর্মযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। মেট্রো রেল,বিআরটি, উড়ালসড়ক—সব প্রকল্পের লক্ষ্য একটাই: নাগরিক জীবনে সহজগতি আনা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই উন্নয়নের পেছনে লুকিয়ে আছে চরম অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং অবহেলা। যার মূল্য দিতে হচ্ছে নিরীহ সাধারণ মানুষকে—কখনও জীবন দিয়ে, কখনও আজীবনের শোক বুকে নিয়ে।

সম্প্রতি রাজধানীর মেট্রো রেলের বেয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু ঘটেছে। এর আগে বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার খুলে পড়ে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন এক পরিবারের পাঁচ সদস্য। প্রতিটি ঘটনার পরই দেখা যায় একই চিত্র—দোষীদের দায় এড়ানোর চেষ্টা, অযোগ্য ঠিকাদারদের রক্ষা, আর সরকারি তত্ত্বাবধানে তদন্তের নামে প্রহসন। কিন্তু হারানো জীবনের ক্ষতি কে পূরণ করবে?

সমস্যার মূলে রয়েছে ঠিকাদারি দুর্নীতি ও যোগ্যতার চেয়ে সম্পর্কের প্রভাব। সরকারি প্রকল্পে কাজ দেওয়া হয় অনেক সময় এমন প্রতিষ্ঠানকে,যাদের প্রয়োজনীয় সক্ষমতা,যন্ত্রপাতি বা অভিজ্ঞতা নেই। বরাদ্দের টাকার ভাগ-বাটোয়ারা হয় রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায়। ফলে নিরাপত্তা মান বজায় না রেখেই চলে নির্মাণ কাজ। প্রকল্পের অগ্রগতির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কমিশন, ঘুষ আর সুবিধা বণ্টনের হিসাব। আর এই অব্যবস্থাপনার শিকার হয় সাধারণ মানুষ—যারা একদিন এই উন্নয়নের সুফল পাওয়ার কথা ছিল।

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো,এসব দুর্ঘটনার পর দায় স্বীকার করার পরিবর্তে কর্তৃপক্ষ অনেক সময় অনৈতিক উপায়ে দোষ ঢাকার চেষ্টা করে। কখনও বলা হয় “দুর্ভাগ্যজনিত দুর্ঘটনা”, কখনও “প্রযুক্তিগত ত্রুটি”—কিন্তু কখনই মূল দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হয় না। ফলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে বারবার। যেন উন্নয়নের পথে মানুষের জীবন আজ এক ‘পরিসংখ্যান’ মাত্র।

একটি সত্য আমাদের মানতেই হবে—নিরাপত্তা ও জবাবদিহিতা ছাড়া কোনো উন্নয়ন টেকসই নয়। শুধু সড়ক, সেতু বা রেললাইন নির্মাণ করলেই উন্নয়ন হয় না; উন্নয়ন তখনই অর্থবহ যখন তা মানুষের জীবনমান উন্নত করে, জীবন কেড়ে নেয় না। তাই এখনই দরকার প্রকল্প বাস্তবায়নে কঠোর তদারকি, যোগ্য ঠিকাদার নির্বাচন এবং প্রতিটি দুর্ঘটনার নিরপেক্ষ বিচার।

সরকারের উচিত জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা—কারণ এই প্রকল্পগুলো জনগণের টাকায় নির্মিত, জনগণের নিরাপত্তাই হওয়া উচিত এর প্রথম শর্ত।
যদি আমরা এখনই দায়িত্বশীল না হই, তবে “উন্নয়ন” শব্দটি মানুষের মনে ভয় আর শোকের প্রতীক হিসেবেই স্থান পাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button