ইসরাইলের প্রচণ্ড বিমান হামলা, টার্গেট ইরানিরা
সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলে হামা ও আলেপ্পো প্রদেশে সরকারি বাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে রোববার রাতে কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এসব জায়গায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র মজুদস্থানকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এতে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই ইরানি নাগরিক বলে জানা গেছে। সিরিয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এ খবর জানিয়েছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরি অব হিউম্যান রাইটস এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছে, যে কয়েকটি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে, তার দুটিতে ‘ইরানি নাগরিকেরা’ অবস্থান করছিল। এ হামলার সাথে এর আগের ইসরাইলি হামলাগুলোর বেশ মিল রয়েছে।
অবজারভেটরি জানিয়েছে, একটি রকেটের গুদাম লক্ষ্য করে রোববারের হামলাটি চালানো হয়েছে এবং তাতে ২৬ জন নিহত হয়েছে যাদের বেশির ভাগই ইরানি ও ইরাকি। সিরিয়ার সরকারবিরোধী একটি সূত্র জানিয়েছে, যে স্থানগুলোতে হামলা চালানো হয়েছে সেগুলোর মধ্যে হামা শহরের নিকটবর্তী সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটি আছে, যেটি ব্রিগেড ৪৭ নামে পরিচিত।
রোববার সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে এই হামলাকে ‘শত্রুদের নতুন আগ্রাসন’ বলে অভিহিত করেছে সেনাবাহিনী। স্থানীয় সময় রোববার রাত সাড়ে ১০টার সময় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে সেনাবাহিনীর এক সূত্রের উদ্ধৃতিতে বলা হয়, ‘নতুন আগ্রাসনের শিকার হয়েছে সিরিয়া। হামা ও আলেপ্পোর গ্রামীণ এলাকার কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিতে শত্রুদের রকেট আঘাত হেনেছে।’
এর আগে সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীগুলোর ঘাঁটিতে ইসরাইল বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছিল। বিশেষ করে লেবাননের শিয়া হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর অস্ত্রবহর লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল দেশটি। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করা হিজবুল্লাহকে নিজের সীমান্তবর্তী এলাকার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে ইসরাইল। সিরিয়ার গণমাধ্যমের এই সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কোনরিকাস বলেছেন, ‘বিদেশী খবর সম্পর্কে আমরা কোনো মন্তব্য করি না, আর এই মুহূর্তে এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্যও নেই।’
গত ৯ এপ্রিল সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলে ইসরাইলের চালানো বিমান হামলার পর দামেস্ক ও ইরানের তরফ থেকে চাপ অব্যাহত রাখার মধ্যেই এই হামলার খবর সামনে এল। বিদ্রোহীদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কারণে গত ১৪ এপ্রিল সিরিয়ার কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিতে যৌথ হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। এরপরই এই নতুন হামলার খবর সামনে এলো।
সিরিয়ার এক সামরিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, হামা ও আলেপ্পো প্রদেশের সামরিক স্থাপনায় নতুন করে চালানো হামলায় মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে। হামা সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলে আর আলেপ্পো উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ। ৯ এপ্রিলে হোমস প্রদেশে হামলায় সাত ইরানিসহ অন্তত ১৪ সেনা নিহত হয়। এই ঘাঁটি প্রেসিডেন্ট বাশারের হয়ে যুদ্ধ করা ইরান-সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়াদের রিক্রুটমেন্ট কেন্দ্র হিসেবে বহুলপরিচিত বলে বলে দাবি করেছেন তিনি। সিরিয়া বিষয়ে অভিজ্ঞ একটি গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, ‘মনে হচ্ছে ইরানের সমর্থিত মিলিশিয়াদের কয়েকটি কমান্ড সেন্টারে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আঘাত হেনেছে এবং এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।’
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ওই সূত্রটি আরো বলেছে, ‘অস্ত্রের গুদামে হামলা হওয়ায় পরেও অনেক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।’ এসব অভিযোগ ও দাবির সত্যাসত্য নির্ধারণ করা যায়নি। চলতি মাসে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, তার দেশ ইরান ও সিরিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া অব্যাহত রাখবে।
এএফপি, রয়টার্স ও টেলিগ্রাফ