প্রত্যাশিত ছিলই। অবশেষে জয় পেলেন ভারতে ক্ষমতাসীন জোট এনডিএ’র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু। প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে তিনি বিরাট ব্যবধানে পরাজিত করলেন।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়েছিল ভোটগণনা। গণনা শেষের পর রাতে জানা গেল ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতির নাম।
প্রতিটি রাউন্ডেই প্রতিপক্ষের থেকে অনেক এগিয়ে ছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। তার ধারে-কাছেও ছিলেন না যশবন্ত সিনহা।
দ্রৌপদীর জয়ে ভারত পেল দেশের ইতিহাসে প্রথম আদিবাসী নারী রাষ্ট্রপতি।
আদিবাসী আবেগে ভর করেই এবার প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট।
অন্যদিকে, তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রস্তাবিত প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে সর্বসম্মতভাবে সমর্থন করেছে বিরোধী দলগুলো।
গত সোমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ হয়। প্রায় ৯৯ শতাংশ ভোট পড়ে সেদিনই। দেশের ৭৭১ জন সাংসদ এবং ৪ হাজার ২৫ জন বিধায়ক ভোটপ্রক্রিয়ায় অংশ নেন। বৃহস্পতিবার, সংসদ ভবনে শুরু হয় ভোটগণনা।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
কে এই দ্রৌপদী মুর্মু
ভারতের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন বিজেপি মনোনীত প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু। ভারতের ইতিহাসে প্রথম সাঁওতাল প্রেসিডেন্ট তিনি। একইসঙ্গে, তিনি দেশটির দ্বিতীয় নারী প্রেসিডেন্ট। বৃহস্পতিবার যশবন্ত সিনহাকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন দ্রৌপদী মুর্মু। উড়িষ্যার অধিবাসী দ্রৌপদী মুর্মু ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের গভর্নর ছিলেন।
সাবেক শিক্ষক ৬৪ বছর বয়সের দ্রৌপদী ওড়িশার মেয়ে। গত কয়েক দশক ধরে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ঝাড়খণ্ডের প্রাদেশিক গভর্নর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতে রাষ্ট্রপতি পদটি অনেকটা অলঙ্কারিক। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ হলেও দেশ পরিচালনায় রাষ্ট্রপতির তেমন কোনও ভূমিকা নেই।
জন্ম ও পরিবার
দ্রৌপদী মুর্মু ১৯৫৮ সালের ২০ জুন ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ জেলার বাইদাপোসি গ্রামে বিরাঞ্চি নারায়ণ টুডুর কাছে একটি সাঁওতালি উপজাতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা এবং দাদা উভয়েই পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থার অধীনে গ্রামের প্রধান ছিলেন।
দ্রৌপদী মুর্মুদ্রৌপদী মুর্মু
দ্রৌপদী মুর্মু শ্যাম চরণ মুর্মুকে বিয়ে করেছিলেন। এই দম্পতির দুটি ছেলে ছিল যারা উভয়ই মারা গেছে এবং একটি মেয়ে আছে।
পেশা
রাজ্য রাজনীতিতে আসার আগে মুর্মু একজন স্কুল শিক্ষক হিসাবে শুরু করেছিলেন। তিনি শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, রায়রঙ্গপুর এর একজন সহকারী অধ্যাপক এবং ওড়িশা সরকারের সেচ বিভাগে জুনিয়র সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন।
রাজনৈতিক জীবন
মুর্মু ১৯৯৭ সালে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেন এবং রায়রঙ্গপুর নগর পঞ্চায়েতের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তিনি ভারতীয় জনতা পার্টি তফসিলি উপজাতি মোর্চার জাতীয় সহ-সভাপতি হিসেবেও কাজ করেছেন।
ওড়িশায় ভারতীয় জনতা পার্টি এবং বিজু জনতা দলের জোট সরকারের সময়, তিনি ৬ মার্চ, ২০০০ থেকে ৬ আগস্ট, ২০০২ পর্যন্ত বাণিজ্য ও পরিবহন এবং ৬ আগস্ট, ২০০২ থেকে ১৬ মে ২০০৪ পর্যন্ত মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উন্নয়নের স্বাধীন দায়িত্বের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ওড়িশার প্রাক্তন মন্ত্রী এবং ২০০৪ এবং ২০০৪ সালে রায়রঙ্গপুর বিধানসভা কেন্দ্রের একজন বিধায়ক। ২০০৭ সালে ওড়িশা বিধানসভা দ্বারা তিনি সেরা বিধায়কের জন্য নীলকণ্ঠ পুরস্কারে ভূষিত হন।
পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের (লোকসভা এবং রাজ্যসভা) সদস্য, দেশটির সবগুলো রাজ্যের বিধানসভার সদস্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর প্রতিনিধিদের ভোটে ভারতে একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
প্রথম কোনও আদিবাসী নারী রাইসিনা হিলের মসনদে যাওয়ায় দেশজুড়ে এই সম্প্রদায়ের সদস্যরা উল্লাস-উদযাপন শুরু করেছেন। দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতর থেকে রোড শোর মাধ্যমে মুর্মুর বিজয় উদযাপন শুরু হয়েছে। এছাড়াও বিজেপির অন্যান্য সব রাজ্য শাখাও বিজয় মিছিলের পরিকল্পনা করেছে।