
রতন ঘোষ, কটিয়াদী প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা রেলস্টেশনের যাত্রীদের দুর্ভোগ দিনের পর দিন চরমে পৌঁছেছে। নানা অনিয়ম আর চরম-অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে রেলস্টেশনটি। সেই সাথে বেরিয়ে এসেছে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়মিত অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি। ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন বর্তমান যাত্রীরা ও অভিজ্ঞ মহল। তাই প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী যাত্রীরা অভিযোগ করেন কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট।
২রা নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান রেল স্টেশনটি পরিদর্শনে যান। সেই সময় অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এগারসিন্ধু গোধূলির ট্রেনটি স্টেশনে আসবে বলে যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড় ছিল। কিন্তু স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা দশ জন হলেও সেসময় উপস্থিত ছিলেন মাত্র একজন। ঠিক সেই সময় চেয়ারে বসে দায়িত্ব পালন করছিলেন মদনমোহন দাস নামে এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি নিজেকে ষ্টেশন মাস্টারের পরিচয় দিলেও তার কথাবার্তায় অসঙ্গতিপূর্ণ আচরন সন্দেহের সৃষ্টি করে। যার ফলে মদন মোহন দাস স্বীকার করেন যে তিনি প্রকৃত স্টেশন মাস্টার নন। তিনি এক সময়ে রেলওয়েতে চাকরি করতেন তবে বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। তাই বর্তমান স্টেশন মাস্টার শাহাবুদ্দিন ফকির কর্মস্থলের বাইরে থাকায় তার অনুপস্থিতিতে স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব পালন করছেন। এসময় স্টেশন মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে তিনি সহকারী স্টেশন মাস্টার মাহবুব হোসেনকে দায়িত্ব দিয়ে এসেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি স্টেশনে অনুপস্থিত থেকে বর্তমানে ঢাকায় আছেন। অন্য সরকারি স্টেশন মাস্টার প্রশিক্ষণে আছেন। পয়েন্টস-মেন হিসেবে কাগজে-কলমে অস্থায়ী একজন সহ পাঁচজন কর্মরত থাকলেও তাদের কাউকেও স্টেশনে পাওয়া যায়নি। গেট কিপার হিসেবে দুজনের মধ্যে একজনকে পাওয়া গেছে। যাত্রীরা জানান কিছুক্ষণের মধ্যেই এগার সিন্ধু গোধূলি ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ থেকে গচিহাটা স্টেশনে এসে পৌঁছবে তাই উক্ত স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনুপস্থিতির কারণে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যান মালের সমূহ ক্ষতি করতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান জানান বৃহস্পতিবার দুপুরে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ও স্কুল পরিদর্শন শেষ করে সহস্রাম – ধুলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শনে যাওয়ার পথে গচিহাটা রেল স্টেশন এলাকায় পৌঁছলে যাত্রীরা এসে স্টেশনে টিকিটের কালোবাজারি, স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং তাদের নিয়মিত অনুপস্থিতির অভিযোগ করেন। আমি তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান কে সাথে নিয়ে স্টেশনটি পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়গুলি অনুসন্ধানের চেষ্টা করে উল্লেখিত ঘটনাগুলির সম্পূর্ণ সত্যতার প্রমাণ পাই। সেই সময় গেট কিপার এর দুজনের মধ্যে একজনকে পাওয়া যায় এবং মদনমোহন দাসের নিকট যাত্রীদের টিকিট কালোবাজারি অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার এবং এই ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সেই সাথে উপস্থিত যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ফেরত দেন।
কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরো বলেন, গচিহাটা স্টেশনে কর্মরতদের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তি ও ক্ষুন্ন হতে পারে। তাই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। সে সময় তিনি স্টেশন মাস্টার শাহাবুদ্দিন ফকিরের মোবাইল ফোনে কল দিলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।