
ভারতের আসাম রাজ্যে চলমান বন্যা নিয়ে রাজ্য সরকারের তৈরি করা রিপোর্টে বাংলাদেশের নোয়াখালি জেলার বন্যার বিখ্যাত একটি পুরনো ছবি ব্যবহৃত হওয়ায় প্রশাসন চরম অস্বস্তিতে পড়েছে।
আর এই রিপোর্টটি যেমন-তেমন কোনও রিপোর্ট নয়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের হাতেই আসামের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এই অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্টটি তুলে দেন।
দশ পাতার এই রিপোর্টে আসামে বন্যার হাল নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে, সেই সঙ্গেই বন্যার দুর্যোগ যে কত ব্যাপক তা বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে মোট নটি ছবি।
কিন্তু এই নটি ছবির মধ্যে একটি হল একটি কিশোর ছোট একটি হরিণশাবককে এক হাতে জলের ওপর তুলে ধরে বন্যার জল ভেঙে এগিয়ে যাচ্ছে।
এই ছবিটি আসলে প্রায় আড়াই বছরের পুরনো – ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বন্যার সময় নোয়াখালিতে এই ছবিটি তুলেছিলেন সে দেশের ফোটোগ্রাফার হাসিবুল ওয়াহাব।
একটি নিউজ এজেন্সির পরিবেশিত ওই ছবিটি লন্ডনের দ্য ডেলি মেইল পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছিল – আর বাংলাদেশের ওই আলোকচিত্রীকে এনে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি।
কিন্তু সেই বিখ্যাত ছবিটি আসামের মুখ্যমন্ত্রীর পেশ করা রিপোর্টে তার রাজ্যের ছবি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, এটা জানাজানি হওয়ার পরই চরম হইচই শুরু হয়ে যায়।
শনিবার রাতে আসামের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে সংবাদমাধ্যমে ইমেইল করে জানানো হয় এই ছবি-কেলেঙ্কারির জেরে নগাঁও জেলার একজন সরকারি কর্মকর্তা মধুমিতা ভাগবতীকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে।
তিনিই নাকি একটি হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপে ছড়িয়ে পড়া ওই ছবিটি সরকারি একটি গ্রুপে ফরোয়ার্ড করেন – এবং বলেন সেটি আসামের কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে বিপন্ন বন্য প্রাণীদের ছবি।
আসাম রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যায় তাদের রাজ্যের অবস্থা সত্যিই দুর্বিষহ – গোটা রাজ্যে প্রায় ৩০জন মারা গেছেন, কাজিরাঙা বা মানাস জাতীয় উদ্যানে বন্য প্রাণীদের অবস্থাও খুবই শোচনীয় – কিন্তু এই ছবি-বিভ্রাট গোটা পরিস্থিতিকে বেশ খেলো করে দিয়েছে এবং সরকারের মুখেও চুনকালি ফেলেছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে তারা অবশ্য শুধু এটুকুই জানাচ্ছেন, ‘আমাদের বন্যা রিপোর্টে অনিচ্ছাকৃতভাবে একটি ছবির ভুল ঘটে গেছে – যে ছবির সঙ্গে আসামের আসলে কোনও সম্পর্ক নেই!’