আবু ধাবিতে বাংলাদেশি মুদি দোকানি হাসান আলীর পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। সেখানে মাংসখেকো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়। এতে মারাত্মক ক্ষতি হয় তার পায়ের। ফলে ওই পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। এখন সফলতার সঙ্গে কেটে ফেলা পায়ের স্থানে বিনামূল্যে চিকিৎসকরা একটি কৃত্রিম পা লাগিয়ে দিয়েছেন। ফলে হাসান আলী বাড়ি ফেরার স্বপ্ন দেখছেন। তার চিকিৎসা করা হয় ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক আবু ধাবিতে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গালফ নিউজ।
এতে বলা হয়, আবুধাবি ভিত্তিক ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক আবু ধাবি সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, আল আইনে এই প্রতিষ্ঠানের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে হার্টের ভালভে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ নিয়ে প্রথমে ভর্তি হয়েছিলেন হাসান আলী। হাসপাতালে অবস্থানকালীন হার্ট থেকে তার পায়ে রক্ত জমাট বাঁধার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়। এতে পায়ে ও অন্যান্য অঙ্গে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এর ফলে তার পায়ে মাংসখোকো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। তাকে জরুরিভিত্তিতে স্থানান্তর করা হয় ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক আবু ধাবিতে। সেখানে সার্জনরা সংক্রমিত হার্টের ভালভ প্রতিস্থাপন করেন। একই সঙ্গে পায়ের জমাটবাঁধা রক্ত অপারেশনের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলেন। একই সঙ্গে সেখানকার টিস্যু সংক্রমণ সরিয়ে ফেলতে কাজ করে যেতে থাকেন। বেশ কয়েক দফা এ চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু সংক্রমণ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এক পর্যায়ে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন তার জীবন বাঁচাতে একমাত্র উপায় হলো পা কেটে ফেলা।
বিষয়টি জানানো হয় হাসান আলীকে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে দেশে রেখে যাওয়া পরিবারের কথা চিন্তা করতে লাগলেন। দেশে আছেন তার স্ত্রী ও তিন সন্তান। তারা তার পাঠানো টাকার ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকেন। হাসান আলী বলেন, ডাক্তাররা যখন আমাকে প্রথম তাদের সিদ্ধান্ত জানালেন, সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তারা আমার পা রক্ষা করার জন্য সর্বোত চেষ্টা করলেন। আমি বুঝতে পারলাম, যদি এটা কেটে ফেলা না হয় তাহলে সংক্রমণ আরো ছড়িয়ে পড়বে। আমার ভয় হলো, এমন হলে কিভাবে পরিবারকে সাপোর্ট দেবো। কিভাবে কাজ অব্যাহত রাখবো।
এগিয়ে এলেন ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক আবু ধাবি’র সমাজকর্মীরা। তারা যোগাযোগ করলেন তার নিয়োগকারী, দূতাবাস এবং স্থানীয় দাতব্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে। তাদের কাছ থেকে একটি কৃত্রিম পা পাওয়ার চেষ্টা করলেন। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক আবু ধাবি’র সমাজকর্মী পল ও’শেয়া বলেন, আমরা তাকে এভাবে সহায়তা করেছি, যাতে তিনি কাজে ফিরতে পারেন এবং পরিবারকে সাপোর্ট দিতে পারেন। তাই তিনি ও ওই হাসপাতালের অন্য সমাজকর্মীরা বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যোগাযোগ করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে। সৌভাগ্য যে, দূতাবাসের বাংলাদেশি সম্প্রদায় তার দ্রুত সুস্থতায় এগিয়ে এলেন। সেখানকার যাকাত ফান্ডের প্রতিনিধিরা এলেন ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক আবু ধাবি’তে হাসান আলীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে এবং বিষয়টি জানতে। তারা পরিস্থিতি অনুধাবন করে তার কৃত্রিম পা দিতে সম্মতি দিয়েছে। এ খবর পেয়ে টিম যোগাযোগ করে আলীকে নিয়োগকারীর সঙ্গে। তিনি নিশ্চিত করেন, হাসান আলী হাসপাতাল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কাজ ফিরে পাবেন।
কৃত্রিম পা লাগানোর পর পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর আলী বাংলাদেশে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর আগে বেশ কয়েক বছর তিনি বাড়ি আসেননি। হাসান আলী এমন সমর্থন দেয়ার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য একটি নতুন জীবন শুরু করতে পারবেন।
সুত্র : গালফ নিউজ/মানবজমিন