আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ: আনন্দ বাজারে আনন্দ নেই। আছে শুধু স্মৃতি। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বানিয়াজুরী এলাকার প্রাচীন জমিদারদের সৃষ্টি করা এই বাজারটিতে এক সময় মণকে মণ দুধের বেচাকেনা হতো, খেজুর গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ছেয়ে যেতো পুরো বাজার আর মাছে মাছে ভরপুর ছিল বাজারের অর্ধেকটা অংশ জুড়েই। কালের আবর্তে এই বাজারের সবকিছুই ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাবার পথে। জমজমাট বাজারটিতে এখন বিকিকিনি নেই বললেই চলে।
এলাকার বয়োবৃদ্ধরা জানান, ভারতবর্ষে সকলের মুখে মুখে পরিচিত ছিল এ বাজারের পরিচিতি। বাংলা ১২৮০ সনে তৎকালীন জমিদার পুত্র আনন্দ মোহনের নামে বাজারের নামকরণ করা হয় “আনন্দ বাজার”. প্রায় চার যুগ আগেও জাঁকজমকপূর্ণ রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হতো এই আনন্দ বাজারে। ১৫ দিন ব্যাপী বসতো মেলা। মেলায় থাকতো গ্রামীণ সংষ্কৃতির নানা অনুষ্ঠান, সার্কাস, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ।
সরজমিন দেখা গেছে, বাজারের সবকিছু হারিয়ে গেলেও এখনও স্মৃতি হিসেবে রয়েছে শতবর্ষী দুটো বৃক্ষ। যা কিনা থুবড়ে পড়া পুরো বাজারটিকে রৌদ্রের তীব্র দহন থেকে আড়াল করে ছায়া দিয়ে রেখেছে আজো। বর্তমানে বাজারের বিকিকিনি নেই বললেই চলে। দুধের দুয়ারী হাতে আশেপাশের ৮/১০ গ্রামের মানুষজন এ বাজারে আসাটাই ভুলে গেছে।
এই বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ আবুল হোসেন বাজার সম্পর্কে বলেন, এক সময় এই বাজারের নামডাক ছিল জেলাজুড়ে। এ বাজারে শত শত মণ দুধ, খেজুর গুড়, মাছ আর মাছের মেলা বসতো বাজার জুড়ে। কিন্তু এখন বাজারটি মরে গেছে। সুশান্ত কর্মকার জানান, বানিয়াজুরী আনন্দ বাজারে একসময় মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রথ, ঢোল পূজা, শিবযাত্রা অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু এখন সেই রথ আগের মতো জমজমাট হয় না। এলাকার শেখ শহীদ আহম্মেদ লাভলু জানান, ছোটবেলায় দেখেছি এই বাজারের জমজমাট বিকিকিনির দৃশ্য। সকাল ৯টায় বাজার বসতো আর শেষ হতো বিকাল তিনটায়। আর এখন আধা ঘণ্টায় বাজার শেষ।
বানিয়াজুরী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাসেম চতু বলেন, যত্রতত্র হাট-বাজার গড়ে ওঠায় পুরনো এই আনন্দ বাজারটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এই বাজারেই ভারত বর্ষের জাঁকজমকপূর্ণ রথযাত্রা হতো। মেলা হতো ১৫ দিন। মেলায় যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ থাকতো। এখন এসব কিছু শুধু স্মৃতি হয়ে আছে।