মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা সদরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু’ গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লাভলু আহমেদ (৩৭) নিহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরো ছয়জন।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ সংঘর্ষ হয়।
নিহত লাভলু কুস্তা গ্রামের মরহুম আব্দুল হালিমের ছেলে। তিনি ২০০৩ সালে উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত চার মাস আগে কুয়েত থেকে দেশে ফিরে লাভলু আহমেদ বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন।
আহতরা হলেন কুস্তা গ্রামের মরহুম দীন ইসলামের ছেলে ঘিওর সদর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রাহাতুজ্জামান খান আলতাফ (৪২), একই গ্রামের শওকত দর্জির ছেলে ওয়ার্ড যুবদল নেতা হিমেল দর্জি (২৫), উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো: আফিকুল ইসলাম, উপজেলা মোড় এলাকার বাসিন্দা মো: রফিকের ছেলে সোহাগ (২৫), আজাদ খানের ছেলে তামিম (২৫) ও শাহ আলমের ছেলে মো: সেলিম (২৮)।
আহতদের ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মুন্নু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও শত্রুতার জের ধরে এ সংঘর্ষ ঘটে। গত তিন মাস ধরে রাজনৈতিক কোন্দল নিয়ে বিএনপির দু’ গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এ নিয়ে কয়েক দফা মারামারি, সালিস বৈঠক ও হামলা-ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা বিএনপির দু’ নেতা জানান, এলাকার ক্ষমতা আর আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ঘিওর সদর (উপজেলা মোড়) ও কুস্তা গ্রামের বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে এ দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এ বিষয়টি নিয়ে জেলা বিএনপির নেতারা কয়েক দফায় আলোচনা করে সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। নেতাদের সামনে সমঝোতা হলেও আড়ালে দু’ পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েই যায়। এর ফলে আজকে সংঘর্ষ হয়েছে।
জানা গেছে, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ঘিওর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যুবদল নেতা কুস্তা গ্রামের বাসিন্দা হিমেলকে উপজেলা মোড় এলাকার সোহাগ, তানভীর, বাবু, শীতল, তামিম, সেলিমসহ ১৫ থেকে ২০ জন মারধর করে। এ সময় দু’ গ্রুপের মারামারিতে আহত হিমেলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাবার পথে পুনরায় তাদের ওপর হামলা চালায়। এরপর ওই আহতদের দেখার জন্য ছাত্রদলের সাবেক নেতা লাভলু মিয়া, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আফিকুল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি রাহাতুজ্জামান আলতাফ হাসপাতালের গেটে যাওয়ার পর পরই তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় প্রতিপক্ষ। এ সময় দেশীয় চাপাতি ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয় লাভলু ও আলতাফকে। খবর পেয়ে ঘিওর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গুরুতর আহত লাভলুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে সেখান থেকে মুন্নু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর মানিকুজ্জামান মানিক বলেন, ‘আমি এলাকায় ছিলাম না। এ বিষয়ে কিছু জানিও না। কোনো মন্তব্যও নেই।’
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবির বলেন, ‘দলীয়ভাবে এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ঘিওর থানা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘দু’ পক্ষের সংঘর্ষে একজন মারা গেছেন। কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’