sliderজাতীয়শিরোনাম

আত্মবিশ্বাস থাকলে ড. ইউনূস বিবৃতি ভিক্ষা করতেন না : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নাম উল্লেখ না করেই বলেছেন তার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের তিনি কেউ নন।

তিনি বলেন, যারা তার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে তারা বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী পাঠিয়ে সব দলিল দস্তাবেজ খতিয়ে দেখুক যে সেখানে অন্যায় বা অসামঞ্জস্যতা আছে কি না।

ঢাকায় গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি ট্যাক্স না দেয় আর শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে এবং সেই শ্রমিকের পক্ষে শ্রম আদালতে মামলা হলে আমাদের কি হাতে আছে যে সে বিচার বন্ধ করে দেবো?’

উল্লেখ্য, সোমবার বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনসহ বিশ্বের ১৬০ জন সুপরিচিত ব্যক্তি ও নেতা অধ্যাপক ইউনূসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে ১০০ বেশি নোবেল বিজয়ী রয়েছেন।

এ চিঠিতে ড. ইউনূসের মামলার বিচারকাজ স্থগিত করার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে গত দু’টি নির্বাচনের বৈধতার সঙ্কট ছিলে জানিয়ে সামনের নির্বাচনের দিকে তাদের নজর রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার খুব অবাক লাগছে। অপরাধ করেননি ভদ্রলোকের যদি এতটাই আত্মবিশ্বাস থাকতো তাহলে তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না।’

‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং সবকিছু আইন মতো চলে। আর এদেশে বিচারাধীন বিষয়ে আমরা কথা বলি না। তাছাড়া আমি কে মামলা প্রত্যাহার করার?’

‘আইন আপন গতিতে চলবে’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা বিবৃতি দিয়েছে তারা এক্সপার্ট পাঠাক, ‘ল’ ইয়ার পাঠাক.., যার বিরুদ্ধে মামলা তার দলিল দস্তাবেজ খতিয়ে দেখুক যে সেখানে কোনো অন্যায় আছে কি না। তারা এসে দেখুক। তাদের এসে দেখা দরকার কী কী অসামঞ্জস্যতা আছে। লেবার ‘ল’ নিয়ে তো অনেক কথা শুনতে হয়।’

‘প্রফিটের ৫ শতাংশ লেবার ওয়েলফেয়ারে দিতে হবে। এখন সেটা কেউ না দিলে এবং লেবাররা যদি তার জন্য মামলা করে, সেজন্য তাদের চাকরিচ্যুত করলে, সেজন্য মামলা হলে, সেই দায়িত্ব তো আমাদের না। এগুলো নিয়ে যারা বিবৃতি দিচ্ছেন তারা ওখানে বসে বিবৃতি না দিয়ে তাদের ক্লায়েন্টের জন্য ‘ল’ ইয়ার পাঠিয়ে দেখুক যে অন্যায় আছে কি না। না কি অন্যায়ভাবে মামলা হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের পাওনা অর্থ সরকারকে তো আদায় করতে হবে। ‘ট্যাক্স দেয়া সব নাগরিকের দায়িত্ব। যারা বিবৃতি দিয়েছে তাদের দেশে ট্যাক্স ফাঁকি দিলে তারা কি চুপ থাকে? এমন অনেক নোবেল লরিয়েট আছেন যারা পরবর্তীতে তাদের কাজের জন্য জেলে গেছেন।’

‘তাই আমি বিবৃতি দাতাদের আহ্বায়ক জানাচ্ছি এক্সপার্ট পাঠান, সব যাচাই করে দেখেন। নয়তো আইন আদালত আছে শ্রম আদালত আছে, আইন তার আপন গতিতে চলবে। আমার আর কোনো কথা নেই’।

‘একজন ব্যাংকের এমডি এবং সেই ব্যাংক সরকারি। সরকারি বেতনভুক এমডি বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কিভাবে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য করে। যারা বিবৃতি দিলেন তারা কি এটা একবারও জিজ্ঞেস করেছেন? কোথা থেকে টাকা এলো, কীভাবে উপার্জন করলো, কেউ জানতে চেয়েছে? প্রশ্ন করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালতের উচিৎ স্বাধীনভাবে কাজ করা, ন্যায় বিচার করা। ‘কে বিবৃতি দিলো তাতে আদালত প্রভাবিত হবে কেন? আদালত ন্যায় বিচার করবে। আদালত স্বাধীনভাবে চলবে। ভয় পেলে তো চলবে না। শ্রমিকদের যা পাওনাতো দিতে হবে। সেখানে অল্প কিছু দিয়ে তারপর ঘুষ দেয়া কি ন্যায়ের কাজ?’

‘ব্রিকসে সদস্যপদ পাওয়ার চিন্তা ছিল না’

ড. ইউনূসকে নিয়ে অনেক কথা বললেও শেখ হাসিনার এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে তার অংশগ্রহণ ও সফর নিয়ে।

এবার ব্রিকস সম্মেলনে ছয়টি দেশকে সংস্থাটির নতুন সদস্য করার সিদ্ধান্ত প্রকাশ পাওয়ার পর বাংলাদেশ কেন সদস্যপদ পেলো না তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়।

এসব নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন এবারের সম্মেলন থেকেই সদস্যপদ পেতে হবে এমন কোনো চেষ্টা তার সরকারের ছিল না।

তিনি বলেন, আমরা চাইলে পাবো না সেই অবস্থা নাই। প্রত্যেক কাজের নিয়ম থাকে। আমরা সে নিয়ম মেনে চলি। আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সদস্যপদ বাড়ানো নিয়ে মতামত জানতে চেয়েছিলেন। তাছাড়া ব্রিকসের পাঁচটি দেশের সরকার প্রধানের সাথে ভালো যোগাযোগ আমার ছিল ও আছে। কিন্তু যখন (ব্রিকস) ব্যাংক হচ্ছে শুনলাম তখন ওটার ওপরই আগ্রহ বেশি ছিল।’

উল্লেখ্য, ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে বাংলাদেশ আগেই যোগ দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিকসের এবারের সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন ভৌগলিক অবস্থা বিবেচনা করে ধাপে ধাপে সদস্য বাড়াবেন।

‘ব্রিকসে প্রথম বারে গিয়েই সদস্যপদ পাবো এমন চিন্তা ছিল না। আমরা কাউকে বলিও নাই। আমরা কাউকে বলতে যাইনি যে আমাদের এখুনি মেম্বার করেন। বাংলাদেশ কিছু চেয়ে পাবে না এটা ঠিক না। বাংলাদেশ এখন ভিক্ষা চাওয়ার দেশ না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল ব্যাংকে যোগ দেয়া, সেটা আমরা করেছি। সেজন্য সেদিকে আগ্রহ বেশি ছিল। আমি বলেছি যখন সময় হবে তখন আমরা বলবো (ব্রিকস সদস্যপদের বিষয়ে)।,

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যের শুরুতেই এবারের ব্রিকস সম্মেলনে নিজের কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা জানান সম্মেলনে তিনি যুদ্ধ বন্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গ : নির্বাচন

নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার জন্য কী উদ্যোগ তিনি নেবেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন তার কাছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মানে হলো নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ।

‘কাদের অংশগ্রহণ? ভোট চোরদের? দুর্নীতিবাজদের? জাতির পিতার হত্যাকারীদের? একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের? তারা অংশ নিলে নির্বাচন বৈধ হবে এটা তো হতে পারে না। ২০০৮ সালে বিএনপি ৩০ সিট পেয়েছিল। এরপর তারা অংশ নেয় না, শুধু বাণিজ্য করে। নিজেরাই মারামারি করে বলতে পারে যে নির্বাচন করতে পারলাম না, প্রত্যাহার করলাম।’

উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে বারাক ওবামাসহ যারা বিবৃতি দিয়েছেন তারাও এটি উল্লেখ করেছেন।

শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন, ‘মিলিটারি ডিকটেররা যখন নির্বাচন করেছিল তখন এরা কোথায় ছিল ? ২০০১ এ আমাদের জোর করে হারানো হলো তখন এ নীতি কথা কোথায় ছিলো?’

‘জিয়ার হ্যাঁ না ভোট। উর্দি পরে নির্বাচন। আর্মি রুলস ভঙ্গ করা। এরশাদের নির্বাচন। খালেদা জিয়ার ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি সেসব ইলেকশন নিয়ে তো কিছু শুনি না। যতই ভালো করি ততই আরো ভালো চাই!’

দেশে হচ্ছে কী? হবে কী?

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের দৃশ্যমান তৎপরতা এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে দেশে কী হতে যাচ্ছে এবং কী হবে মানুষ এমন প্রশ্ন করছে মন্তব্য করে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান দেশে আসলে হচ্ছে কী এবং হবে কী?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন এটা জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি চায়। ‘মেট্রোরেল ও টানেলসহ সবকিছু জনস্বার্থেই করেছি। যারা দেশ চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে, জনগণ যাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাদের মনের বেদনা তো আছেই। তারা সবকিছুতে খারাপই দেখে।’

তিনি বলেন, বিদেশে গেলে প্রতিটি দেশে যার সাথেই তার দেখা হয়েছে তারাই জিজ্ঞেস করেছে কী করে বাংলাদেশ এমন উন্নতি করলো।

‘শুধু আমাদের কিছু লোক আছে যারা পরশ্রীকাতরতায় ভোগে। তাতে আমার কিছুই করার নেই। কে কী বলল তা নিয়ে আমি কমই চিন্তা করি। যতক্ষণ আছি দেশের জন্য কাজ করবো।’

সূত্র : বিবিসি

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button