মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : সরাসরি আওয়ামী রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ডাকরখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাইদ হোসেন (৫৫) বিস্ফোরক মামলার আসামী হয়ে পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে। এতে করে প্রায় ২০ দিন ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় শিক্ষা ব্যবস্থাসহ ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান বিঘ্নের অভিযোগ উঠেছে। সে উপজেলার বঙ্গবন্ধু পেশাজীবি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি নামক সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে আওয়ামী সরকারের ১৫ বছরে শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, আওয়ামী শাসনামলে ২০২২ সালের ৩০ মে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতার উপজেলা সদরের বয়ড়ার বাস ভবনে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ হামলা চালায়। এ ঘটনায় গত ২৯ অক্টোবর মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও দেশ বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে প্রধান আসামী করে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের ৮৬ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হরিরামপুর থানায় মামলা করেন বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন দুলাল। এ মামলার এজাহারভুক্ত তালিকায় ৩৫ নাম্বার আসামী মো. সাইদ হোসেন। এঘটনায় তিনি গত ৩১ অক্টোবরের থেকেই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়। মামলার পর থেকেই তিনি গা ঢাকা দিয়ে প্রায় ২০ দিন যাবৎ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থাসহ পাঠদানেও বিঘ্ন ঘটছে বলে বিদ্যালয়ের অভিভাবকসহ এলাকার সচেতন মহল দাবি করেন।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গেলে দেখা পাওয়া যায়নি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাইদ হোসেনকে। শিক্ষকদের অফিস কক্ষে প্রবেশ করে প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক ইয়াসমিন আক্তার জানান, পাইলসের সমস্যা জনিত কারণে স্যার ৬ নভেম্বর থেকে মেডিকেল ছুটিতে আছেন। ৩০ অক্টোবর তিনি সর্বশেষ অফিস করেন। তবে স্যার মেডিকেল ছুটির একটি আবেদনপত্র ডাক যোগে উপজেলা শিক্ষা অফিসে পাঠিয়েছেন। আবেদনের একটা অনুলিপি কপি আমাদের কাছে আছে বলেও জানান ওই শিক্ষক।”
তবে একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় একাধিক শিক্ষকেরা এর তীব্র নিন্দা জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষকেরা অভিযোগ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবি শিক্ষক সমিতির সভাপতির পদ ব্যবহার করে এই প্রধান শিক্ষক মো. সাইদ হোসেন বিভিন্ন সময়ে অনেক নিরীহ শিক্ষককে নানাভাবে হুমকি, ধামকি এবং কুৎসা রটনাসহ নামে বেনামে মিথ্যা অভিযোগসহ শিক্ষকদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করেছে। ইতোপূর্বে সরকারি চাকুরি বিধি ভঙ্গ করায় এবং অনৈতিক কাজের দায়ে একাধিকবার এই প্রধান শিক্ষকের বিভাগীয় শাস্তি হয়েছে বলেও সূত্র জানা যায়। একজন প্রধান শিক্ষক রাজনৈতিকভাবে বিস্ফোরক মামলার আসামী, এটা শিক্ষক সমাজের জন্য ঘৃণার এবং অনেক সম্মানহানির বিষয় বলেও মন্তব্য করেন উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক।
প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতি সম্পর্কে গোড়াইল গ্রামের বাসিন্দা বিদ্যালয়ের অভিভাবক মুক্তা বেগম জানান, শুনেছি প্রধান শিক্ষকের নামে নাকি মামলা হয়েছে। তাই বেশ কয়েকদিন ধরেই সে বিদ্যালয়ে আসে না। সামনে বাচ্চাদের বার্ষিক পরীক্ষা। এ সময় ঠিক মতো ক্লাশ না করলে তো বাচ্চাদের সমস্যা হবে। তার অনুপস্থিতিতে ঠিক মতো ক্লাশও হয় না।
একই গ্রামের বাসিম্দা মো. মহিদুর রহমান জানান, নাশকতা মামলায় পরে আজ বেশ কিছুদিন ধরে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসে না। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা।এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। দুই একদিন হলে ঠিক আছে। দিনের পর দিন তিনি অনুপস্থিত। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একজন প্রধান শিক্ষক হয়ে সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িত, এটা আমাদের কাম্য নয়।
এ বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক মো. সাইদ হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে একাধিকবার কল দিয়েও তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, মো. সাইদ হোসেনের মামলার বিষয়টি আমরা জেনেছি। অন্য মাধ্যমে মামলার কপিও পেয়েছি। তিনি ডাক যোগে একটি ছুটির আবেদন এবং এক পেজের মেডিকেল সনদের একটা কপি পাঠিয়েছেন। তিনি ৩০ অক্টোবরের পর থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। আমরা তার মেডিকেল সনদটি আমাদের শিক্ষা অধিদপ্তরের মেডিকেল বোর্ডে পাঠাবো। সেখানে যাচাই বাছাই শেষে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এরমধ্যে তাকে আমরা একটা নোটিশও পাঠাবো। বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা যেন স্বাভাবিক থাকে সেদিকে আমরা শতভাগ দৃষ্টি রাখছি।