চৌধুরী জীবন: গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সুদীর্ঘ ১৫ বছর চরম স্বৈরশাসনের পর স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস, সাইকোপ্যাথ শাসক ও শাসনামলের অবসান হলো। বাংলাদেশের মানুষের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হলো ফ্যাসিস্ট সরকার প্রশান শেখ হাসিনার গণহত্যার মধ্য দিয়ে।
গাজী সাইফুল পেশায় একজন সাংবাদিক। কাজ করেছেন সাপ্তাহিক সময়, জাগোনিউজ সহ দেশের একাধিক গণমাধ্যমে। একই সাথে একজন তরুণ প্রজন্মের কথা-সাহিত্যিক ও রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিত্ব।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) রাজনীতির সাথেও রয়েছে দীর্ঘ সময়ের সম্পৃক্ততা। সরব ভূমিকা রেখেছেন আওয়ামী অপরাজনীতি ও অপশাসনের বিরুদ্ধে।
স্বৈরাচারিণী শেখ হাসিনার অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে, গণমানুষের অধিকার আদায় সহ দেশে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে বিএনপির চলমান আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে কাজ করেছেন। শিকার হয়েছেন রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন ও নিপিড়নের। নিরবে নিভৃতে ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি বাধ্য হয়েছেন দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমাতে।
উল্লেখ্য, বিএনপি’র উচ্চ পর্যায়ে ২০২০ সালের ১৪ই আগস্ট চীনা কূটনৈতিকদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশস্ত চীনা দূতাবাসে। এর নেপথ্যে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন গাজী সাইফুল। যার ফলশ্রুতিতে একটি সফল বৈঠকের অংশ হিসেবে সম্পর্ক উন্নয়নে চীনা দূতাবাস বৈঠকের পরবর্তী ১৫ আগস্টে বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার জন্মদিনে ফুলের শুভেচ্ছা জানায়। যা সে সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে চীনের অকৃত্রিম সম্পর্কের মাঝে এক ধরণের অনাস্থা তৈরি করে।
পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চীনা দূতাবাস বেগম খালেদা জিয়াকে পাঠানো ফুল ফিরিয়ে নিয়েছে। এবং একই সাথে ১৫ আগস্টের বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখটি সঠিক নয় উল্লেখ করে এর সবকিছুই ছিলো আওয়ামী লীগের একদলীয় স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ। এই বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমী এলাকা থেকে ২৬শে আগস্ট তাকে সাদা পোশাকে তিন থেকে চারজন গোয়েন্দা সংস্থার লোক দেখা করতে গেলে তাকে তুলে নিয়ে যায়।
তিনি জানান, “গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা আমার সাথে চীনা দূতাবাসের বৈঠকটির বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু যখনই তাদের সাথে আমি দেখা করি, আমাকে সাদা একটি মাইক্রোবাসে উঠানো হয় জোর করে। গাড়িতে উঠানোর পর মুহূর্তেই আমাকে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে চোখ কালো কাপড়ে বেঁধে ফেলা হয়। আমাকে যখন চোখ খোলা হয় কিছু সময়ের জন্য আমি দেখলাম সেখানে রুমটি যথেষ্ট ময়লা আবর্জনায় ভরা। ভবনটি পাঁচ থেকে ছয় তলা হবে। রুমে একটি টেবিল ও দুটো চেয়ার ছাড়া কিছুই ছিলো না।”
তিনি আরও বলেন, এরপর একজন লোক এসে আমাকে ‘চা’ খেতে দিলো। কিন্তু তখনও আমার হাতে হ্যান্ডকাফ লাগানো। আমি খুবই ভীতসন্ত্রস্ত ছিলাম। এরপর আমার চোখ আবারো কালো কাপড়ে শক্তভাবে বেঁধে দেওয়া হয়। তিন থেকে চারজন অফিসার আমাকে চীনা দূতাবাসের সাথে বৈঠকটির বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে বৈঠকের পর কূটনৈতিকদের সাথে আমার পুনরায় কোন বৈঠক না হওয়ায় আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত ছিলাম না।”
গাজী সাইফুল বলেন, তাদের কোন প্রশ্নের উত্তরই আমি একজেক্ট দিতে চাচ্ছিলাম না। এক পর্যায়ে আমাকে এলোপাথাড়ি মারধর করা হয়। আমাকে লাথি মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দেওয়া হয়। প্রচণ্ড মারধরে আমি এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে জ্ঞান ফিরলে একজন অফিসার আমার সাথে কথা বলেন। আমাকে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিতে বলা হয়। একই সাথে বিএনপি’র সাথে সম্পৃক্ততা এবং দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। যার ফলশ্রুতিতে পড়াশুনা জীবন রক্ষার্থে আমি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমাই। এরপরও আমাকে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে একটি মামলায় জড়ানো হয়। মামলাটি পল্টন থানায় করা হয়, মামলা নম্বর – ৫৩/ ৫২৪।”
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনা সমগ্র দেশটিকে একটি টর্চার সেলে পরিণত করেছিলো। যার ভিক্টিম আমি নিজেও। এর দোসররা সরকার পরিবর্তনের পরও দেশে আবারও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে।”