শিবালয় প্রতিনিধি: বিদ্যালয়টিতে যাতায়াতে শিক্ষার্থীরা ৫২ বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার হচ্ছে। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার দিঘলিয়া ইউনিয়নের আংগুটিয়া গ্রামে এমনই একটি বিদ্যালয়ের খোঁজ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, আংগুটিয়া গ্রামের ভেতর দিয়ে দুটি খাল বয়ে গেছে। এর মধ্যে একটি খাল পার হয়ে আংগুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। খালটি সরু হওয়ায় স্থানীয়দের সহায়তায় মাটি ভরাট করে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সে বাঁধ ভেঙে যায়। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অহেতুক সেতু নির্মাণ করা হলেও এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার জন্য খালের ওপর ৫২ বছরে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ স্থানীয় মানুষ।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, আংগুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নের মালপত্র নেওয়ার জন্য সড়ক ও খালের ওপর সেতু না থাকায় বিদ্যালয়টির উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে, ১৯৭২ সালে আংগুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ২০১২ সালে জাতীয়করণ করা হয়। বিদ্যালয়টিতে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ১১০ জন। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাত্র একটি সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। স্কুল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে। পারাপারের সময় অনেক শিক্ষার্থী সাঁকো থেকে খালে পড়ে যায়। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা সাঁকোর মাঝপথে গিয়ে নড়াচড়া করলে অন্য শিক্ষার্থীরা সাঁকো থেকে পড়ে যায়। এ সময় তাদের বই-খাতা ও পোশাক কাদাপানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায়।
আংগুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আলী হোসেনের মা মারিয়া আক্তার শিউলি জানান,বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে একটি খাল রয়েছে। ওই খালের ওপর সেতু না থাকায় শিশুরা স্কুলে যেতে চায় না। বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপারের সময় তারা পড়ে যায় কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। এ জন্য সংসারের কাজ ফেলে বাচ্চা নিয়ে স্কুলে বসে থাকতে হয়।
এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা কোমলমতি শিশুদের কথা চিন্তা করে হলেও খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান।
প্রধান শিক্ষক মো.শওকত আলী বলেন, খালের ওপর সেতু না থাকায় শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা খালে পড়ে যাবে কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় শিক্ষকদেরও। দুটি বাঁশ ফেলে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সেতুর ওপর দিয়ে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া করতে অনেক কষ্ট হয়। অনেক শিশু সাঁতার জানে না। তারা পানিতে পড়ে গেলেই ঘটবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। অনেকে খালে পড়ে গিয়ে বই, খাতা ও স্কুলড্রেস ভিজিয়ে স্কুলে আসে।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, এই খালের ওপর সেতু না থাকায় বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। বর্ষা মৌসুম এলেই এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
সাটুরিয়ার ইউএনও মোঃ ইকবাল হোসেন জানান, তিনি সদ্য যোগদান করেছেন। বিদ্যালয়টির বিষয়ে জানেন না। তবে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে শিগগির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।