জাতীয়শিরোনাম

অন স্পট নিবন্ধন বন্ধে কমেছে টিকা গ্রহণ

টিকাকেন্দ্রে নিবন্ধনের সুযোগ বন্ধ করে দেয়ার পর করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণের সংখ্যা কমেছে। শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকায় শনিবার সকাল থেকে সারা দেশের কেন্দ্রগুলোতে টিকা নিতে ভিড় করেন আগ্রহীরা। তবে দিন শেষে দেখা গেছে, আগের কর্মদিবসের চেয়ে কম সংখ্যক মানুষ টিকা নিয়েছেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ২ লাখ ৪ হাজার ৫৪০ জন টিকা নেন। শনিবার টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৭১ জন। এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৭ লাখ ৩৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। বৃহস্পতিবার টিকাকেন্দ্রে অন স্পট নিবন্ধন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। শুরুতে ভ্যাকসিন নিয়ে তেমন আগ্রহ না থাকলেও কার্যক্রম শুরুর পর ভ্যাকসিন নেয়া এবং নিবন্ধন দুটোই বাড়তে থাকে।

এ অবস্থায় কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড় হচ্ছে এ কারণে অন স্পট নিবন্ধন বন্ধ করে দেয়ার কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। যদিও বিশেষজ্ঞরা এ সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। গতকাল অবশ্য স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, বয়স্ক এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য এই সুবিধা দেয়ার বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।

গত রোববার থেকে সারা দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথম দিন ৩১ হাজারের বেশি মানুষ টিকা দেন। দ্বিতীয় দিন তা দাঁড়ায় ৪৬ হাজারে। তৃতীয় দিনে তা লাখ ছাড়ায়। চতুর্থদিন এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫১। শনিবার ঢাকা মহানগরে টিকা গ্রহণ করেছেন ২৬ হাজার ৫৬৪ জন। ঢাকা বিভাগে টিকা নিয়েছেন ৫৪ হাজার ৬৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৮ হাজার ৯০ জন, চট্টগ্রামে ৪৭ হাজার ৭১৮, রাজশাহীতে ২২ হাজার ৭৪, রংপুরে ১৭ হাজার ৫৪২, খুলনায় ২১ হাজার ২৭৮, বরিশালে ৭ হাজার ৫১৩ জন ও সিলেট বিভাগে ১৬ হাজার ৮৭ জন।

দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় আগেই যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন তারাই নিতে পারছেন টিকা। কর্তৃপক্ষ বলছে, এরমাধ্যমে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা কম হলেও শৃঙ্খলার মাধ্যমে টিকা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। শনিবার টিকাগ্রহণ করেন ১৩৫৭ জন। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ১৪৫৮ জন।

শনিবার টিকা নিতে আসেন বেসরকারি একটি ব্যাংকের চাকরিজীবী আসিফ তালুকদার। তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংক থেকে টিকার জন্য তালিকা করা হয়। এরপর অনলাইনে আবেদন করে চলে আসি। আমরা যেহেতু করোনার ভীতির সময়েও নিয়মিত অফিসে গিয়েছিলাম সেহেতু আমরা জানি এর ভীতি কতোটা। তাই যত তাড়াতাড়ি পারি নিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি। তিনি আরো বলেন, শুরুতে বেশ ভীত ছিলাম। টিকা নেবো কিনা এনিয়ে বেশ দ্বিধা কাজ করছিল। তবে ধীরে ধীরে সেই ভীতি কেটেছে। আমি বেশ আনন্দিত।

বাংলাদেশ বুদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের প্রেসিডেন্ট বুদ্ধাপ্রিয়া মহাথেরো টিকা নিয়েছেন গতকাল। তিনি দাবি করেন, ভিক্ষুদের মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম তিনি টিকা গ্রহণ করেছেন। তিনি সকলকে টিকা গ্রহণের আহ্বান জানান।
৬২ বছর বয়সী ডা. সেলিনা রহমান টিকা নিয়ে ফেরার সময় বলেন, কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। আমি ডাক্তার হিসেবে বলতে চাই, এই টিকা সকলের নেয়া উচিত। এ ছাড়াও বিশ্রামাগারে ১২ জন টিকা গ্রহীতার সঙ্গে কথা বলা হলে তারা জানান, তারা কোনো সমস্যায় পড়েননি।

টিকা গ্রহীতাদের কোনো সমস্যা হলে একটি নম্বরে যোগাযোগের জন্য বলা হয়। সেই নম্বরে ফোন দেয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. তানিয়া বলেন, অন স্পট রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করা হয়েছে। কারণ বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছিল। ভিড়ের কারণে অনেকে রেজিস্ট্রেশন করবার পরেও টিকা নিতে পারেননি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে চলে যান অনেকে। এমনকি বাকবিতণ্ডারও সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এখন আমরা শান্তিপূর্ণভাবে টিকা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছি। তিনি আরো বলেন, আজ (গতকাল শনিবার) ১৫টি কল পেয়েছি। তারা হালকা জ্বর জ্বর ভাব, ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস জ্বর, শরীর ব্যথা, সর্দি, পাতলা পায়খানার কথা জানান। আমরা তাদের জানাই এটা কোনো সমস্যা না। সকলকেই প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির টিকা প্রদান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান। এ সময় তিনি বলেন, যাদের বয়স বেশি বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ, তারা জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে গেলে তাদের নিবন্ধন করে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করার কথা ভাবছে সরকার। তিনি আরো বলেন, ৩৫ লাখ টিকা দেয়ার পর আমরা পরিসংখ্যান যাচাই করবো। যদি দেখা যায়, গ্রামের মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার প্রবণতা কম তাহলে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মানবজমিন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button