আজ বিকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব চত্তরে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত জনসভায় পার্টির সাধারণ সম্পাদক জননেতা সাইফুল হক বলেছেন, সফল হতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে ডাবল ইঞ্জিনের গতি আনা জরুরী। ছাত্র শ্রমিক জনতার গণঅভ্যুত্থানের গণতান্ত্রিক আকাংখা বাস্তবায়নে সরকারকে তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের দৃশ্যমান সাফল্য দেখাতে হবে।গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন আকাংখা যাতে হতাশায় পরিনত না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।কোন কোটারী স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যবহ্রত হবার কোন সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ছাত্র শ্রমিক জনতার গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি নানা ইস্যুতে, চেহারায় ফিরে আসার চেষ্টা করছে। অভ্যুত্থানের সাফল্যকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চলছে; নানা ধরনের উসকানি, নৈরাজ্যে বাতাস দেয়া হচ্ছে, পৈশাচিক বর্বরতায় গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের মাঝেও এরা ঢুকে পড়ছে। তিনি নাশকতার এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ অব্যাহত রাখার আহবান জানান।
তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ নয়, বন্ধ করতে হবে ছাত্র রাজনীতির নামে দখলদারিত্ব, গুন্ডামী ও সন্ত্রাস।
তিনি বলেন জরুরী ভিত্তিতে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।তিনি বলেন সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে দায়িত্বশীলতার সাথে তাদের ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে।
তিনি বলেন, ওসমান পরিবার পালিয়েছে সত্য, কিন্তু তাদের মত আর কোন মাফিয়ারা যাতে জেলায় জেলায় জন্ম নিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে, কিন্তু ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা অক্ষুণ্ণ আছে।এই ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করতে না পারলে ফ্যাসিবাদ আবার জেঁকে বসবে।
তিনি ত্বকি হত্যা ও সাংবাদিক সাগর রুণি হত্যার মত রোমহষর্ক হত্যাকান্ডসমূহের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিচার করার দাবি জানান।
বহ্নিশিখা জামালী বলেন, গণঅভ্যুত্থানে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ সবচেয়ে বেশি প্রাণ দিলেও গত দেড়মাসে তাদের উপযুক্ত মূল্যায়ন হয়নি, তাদের বাঁচার ন্যায্য দাবি এখনও পূরণ হয়নি।
আবু হাসান টিপু বলেন, গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সাথে কারও বেঈমানী করার অবকাশ নেই। খুনিদের সাম্রাজ্য আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সারাদেশে ভয়ের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে যারা কথায় কথায় ‘খেলার’ আহবান করতেন ফাইনাল খেলার দিন তারাই ভিটেমাটি ত্যাগ করে মাঠ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। গায়েবী মামলা করে নিরীহ মানুষকে গণগ্রেফতার করে অবর্ণনীয় নির্যাতনসহ হত্যা, খুন, গুম করে তারা যে ভয়ের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান সেই রাজত্বকে তছনছ করে দিয়েছে। সারা বিশ্বের জুলুমবাজ স্বৈরশাসকদের জন্য এই ঘটনা একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে। তিনি অধিকার ও মুক্তিঅর্জনে জনগণকে রাজপথে সজাগ থাকার আহবান জানান।
সভার সভাপতি মাহমুদ হোসেন বলেন, যারা ছাত্র শ্রমিক জনতাকে হত্যা করেছে, দেশকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিচার করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় সকল বৈষম্যের বিলোপ করতে হবে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাম্যভিত্তিক মানবিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত এগিয়ে নেবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নারায়নগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আবু হাসান টিপু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শহীদুল আলম নান্নু, রাশিদা বেগম, সাইফুল ইসলাম, পার্টির মুন্সিগঞ্জ জেলা সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ শিমুল, শ্রমিক নেতা আইয়ুব আলী, হেলিম সরদার, মোহাম্মদ বাদশা, বিপ্লবী যুব সংহতির কেন্দ্রীয় আহবায়ক বাবর চৌধুরী প্রমুখ।
সভার শুরুতে গণঅভ্যুত্থানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির দুই শহীদ বদিউজ্জামান ও আবদুল লতিফসহ গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।