sliderরাজনীতিশিরোনাম

অনিয়ম দূর্নীতি দূর করে স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে-এবি পার্টি

পতাকা ডেস্ক: পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার দেশের প্রতিটা খাতকেই দূর্নীতি আর লুটপাটের মাধ্যমে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে। এরমধ্যে স্বাস্থ্য খাতের দূর্নীতি আপামর জনসাধারণকে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে ফেলেছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। তাই এখনো যখন সরকারি হাসপাতাল গুলোতে গিয়ে জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবার নূন্যতমও পায়না তখন তারা হতাশ হয়ে পরে। এমতাবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম দূর্নীতি দূর করে সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি। আজ “স্বাস্থ্য খাতে সীমাহীন দুর্নীতি, অসহনীয় নৈরাজ্য, বদলী নিয়োগ বানিজ্য বন্ধ করা ও ঘুনে ধরা স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতি সংস্কার”র দাবিতে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এই দাবি জানায় দলটি। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসম্পর্কিত বক্তব্য তুলে ধরেন এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক প্রফেসর ডাঃ মেজর (অবঃ) আব্দুল ওহাব মিনার। এসময় স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার নিয়ে কথা বলেন, বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা ডাঃ মোজাহেরুল হক ও গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের ফরেন্সিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ শওকত আরমান। এবি পার্টির নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, সহকারী সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান।


প্রফেসর আব্দুল ওহাব মিনার পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দলীয় মুদির দোকানের মতো ব্যবহার করে কিভাবে জনগণকে স্বাস্থ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে তার চিত্র তুলে ধরে বলেন ” ভোট বিহীন অবৈধ সরকারের জনগণের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা ছিলনা বলেই স্বাস্থ্য প্রশাসন, ঔষধ প্রশাসন, সরকারি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের বদলি নিয়োগ পদোন্নতি, মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরের অধীনে ক্রয় বিক্রয়-  সর্বত্র বাকশালী চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। কোন দুর্নীতি বা অনিয়মের বিরোধিতা করার, “টু” শব্দটি করার সাহস কারো ছিল না। তাই আজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে  প্রশিক্ষিত জনশক্তির অভাব, চিকিৎসা ব্যয়ভার সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সেবাকর্মীদের সহযোগিতায় অপ্রতিরোধ্য দালাল চক্রের তান্ডব,
রাজনৈতিক মেরুকরণ এর জন্য স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব- দলাদলি। এসবের কারণে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ । স্বাস্থ্য সেবার প্রতি আস্থা হারিয়ে একশ্রেণীর মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে এবং সেখানেও তারা প্রতারণার, বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।
এই সকল অনিয়ম দুর্নীতি যাদের দেখার কথা ছিল সেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর , বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন- তারা নিজেদের সত্তা বিকিয়ে দিয়ে- নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে শুধু নেত্রী বন্দনায় ব্যাকুল ছিল। তাই স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা নিজ মুখে বলেছিলেন ” আইন কানুন বিচার না করে  বিদেশ থেকে আমি সিরিঞ্জ কিনেছি ভ্যাকসিন এনেছি। ” করোনাকালীন সময়ে পতিত সরকার সৃষ্টি করেছিল ডা. সাবরিনা ও সাহেদদের মতো চরিত্র।
২০১৫ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, মহাপরিচালকের ড্রাইভার মালেকের শতকোটি টাকার সন্ধান, কথিত বালিশ উত্তোলন ও পর্দা কেনা কাণ্ড সব ডিজিটাল হাসিনা সরকারের বিশেষ উপহার যার বিরুদ্ধে কথা বলার মত সাহস নামী দামী কোন একজন চিকিৎসক বা নাগরিকের ছিল না।
স্বাস্থ্য খাতের দীর্ঘদিনের অনিয়ম নৈরাজ্য রোধকল্পে এবং সাধারণ মানুষের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রফেসর আব্দুল ওহাব মিনার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট নিম্নোক্ত দাবি সমুহ উপস্থাপন করেন;
১. “জাতীয় স্বাস্থ্য সার্ভিস কমিশন” গঠন করা
২. “জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন” প্রণয়ন করা
৩. জনস্বাস্থ্য ও প্রাইমারি হেল্থ কেয়ারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া
৪. স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা
৫. বেসরকারি পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী চিকিৎসকদের ও ইন্টার্নদের সম্মানজনক ভাতা প্রদান
৬. রেফারেল সিস্টেম চালু করা
ডাঃ মোজাহেরুল হক বলেন, রাষ্ট্র আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয় স্বাস্থ্য খাতের মাধ্যমে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার সুন্দর সাজানো সিস্টেম রয়েছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং জেলা পর্যায়ে জেলা সদর হাসপাতাল রয়েছে।শুধু মাত্র হাসপাতাল গুলো কার্যকর না থাকায় মানুষ সঠিক স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেনা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমি বলবো এই হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোকে কার্যকর করতে হবে, সেই সাথে আমাদের মেডিকেল শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হবে।
ডাঃ আরমান বলেন, এবি পার্টিকে কেন্দ্র করে আমরা স্বাস্থ্য সেবাকে কেন্দ্র করে নতুন ভাবে চিন্তা করছি। সেই সাথে আমি স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে অনুরোধ করবো প্রকাশ্যে ধুমপান নিষিদ্ধের আইন হলেও তা কার্যকর নয়, তিনি যেন এটা পুরোপুরি কার্যকর করার ব্যবস্থা করেন।

মিডিয়া ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন ডাঃ রোহিত খান, ডাঃ আজম ইকবাল খান, ডাঃ রাকিবুল ইসলাম, ডাঃ ওয়াহিদ হৃদয়, এবি পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল হালিম খোকন, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুর রব জামিল, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব আহমেদ বারকাজ নাসির, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমেনা বেগম, সুলতানা রাজিয়া, তোফাজ্জল হোসেন রমিজ সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button